বাবার কবরের পাশে- রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের প্রতিযোগীতায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী পিতৃহারা নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার পৌর এলাকার রেহানিয়া গ্রামে বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলো শিক্ষার্থী রাজীব।
সোমবার সকাল ১০টায় তাদের পৈত্রিক নিবাস রেহানিয়া গ্রামের মসজিদে সামনে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তার নামাজে জানাজায় স্থানীয় অধিবাসীরা ছাড়াও তার স্কুলের সতীর্থসহ শিক্ষক-ছাত্ররা অংশ নেয়।
তার অকাল মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসে তার বিদ্যালয় মফিজিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ তার সতীর্থরা। সকাল ৯টায় তার মরদেহ ঢাকা থেকে জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নিয়ে আসে স্বজনরা।
সে সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমায়। এদিকে সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে কাল বিকেল থেকে মা মোহনা আকতার অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছেন।
নিহত আবদুল করিমের ছোট মামা মহিউদ্দিন জানায়, ছোট বেলায় সে তারা বাবা নুর ইসলামকে হারায়। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তার দুই বোনের বিয়ে হয়ে যায়। পরে বড় ভাই মফিজ উদ্দিন তার মাসহ দুই ভাইকে হাতিয়ায় নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে।
এখানে থেকে সে স্থানীয় মফিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাশ করে। পরে তার ভাই মফিজ তাকে ঢাকায় নিয়ে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টমেন্ট কলেজে ভর্তি করে। সেখানে সে তার মামা এবং খালার বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। তার ইচ্ছে ছিল ভালোভাবে পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করে মায়ের জন্য কিছু করা তা আর হলো না।
সারা জীবন মামাদের কাছে থেকে তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তার পূর্ণ হলো না। ঘাতক বাস তাকে আমাদের কাছ থেকে অকালে নিয়ে গেছে। তার ছোট ভাই মো. আল আমিন ঢাকার একটি স্কুলে পড়ালেখা করছে। সেও তার ভাইকে এভাবে হারিয়ে অনেকটা পাগলের মতো চিৎকার করছে।
তার বড় মামা মফিজ উদ্দিন জানান, তাদের আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই, পিতৃহীন রাজীব ও তার সহপাঠিদের মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। তার মাকে কি দিয়ে সান্ত্বনা দেব সে ভাষা আমার নেই, তার ছেলেকে ঢাকায় পড়ালেখা করাতে নিয়ে এভাবে নিয়ে আসবো তা ভাবতে পারছি না, কি দিয়ে আমার অকালে স্বামী হারা বোনকে সান্ত্বনা দেব তা জানি না।
মফিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর নবী জানান, এভাবে রাজীবের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। আমাদের প্রিয় ছাত্রের এভাবে ঘাতক চালকদের হাতে মৃত্যু হবে তা ভাবতে পারছি না। সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক রাজিব অকালে হারিয়ে যাবে, অনেক মেধাবীকে আমরা হারাবো।